কেউ ছোট নয়

সম্রাট একদিন বেশ হাসিখুশি মুখে ছিলেন। সেই সুযোগে বীরবল বললেন, সম্রাট, আপনার কাছে একটি ভিক্ষে চাই?’
সম্রাট বললেন, ‘বেশ তো, বলো? ‘ যদি আমি কোনওদিন দোষ করি, আমার মনোনীত জুরিরা যেন আমার বিচার করেন। বাদশা বললেন, ‘বেশ ভাল কথা। তাই হবে।’ বেশ কিছুদিন পরে ইচ্ছা করেই বীরবল একটি ঘোরতর অন্যায় কার্য করে বসলেন। সম্রাট স্থির করলেন বীরবলকে শাস্তি দিতেই হবে। এমন উপায় নেই। বীরবল বেশ বুঝতে পারলেন, যদি ঠিকমতো শাস্তি হয় তবে অন্তত দশ-বিশ হাজার টাকা তার অর্থদণ্ড হতে বাধ্য। কিন্তু সেই সময় সম্রাটকে তিনি পূর্বপ্রতিজ্ঞা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললেন, ‘হুজুর, আমার জুরিদের আমিই স্থির করব বলে যে ভিক্ষা চেয়েছিলাম, এবং আপনি ভিক্ষা দেবেন বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন, অতএব আপনার কথা যদি এখন রাখেন তবে আমার পক্ষে ভাল হয়।

সম্রাট বললেন, ‘তাই হোক, পাঁচজন বিচারক স্থির করে দাও, তাদের বিচার যাই হোক না কেন তোমাকে কথা দিলাম, আমি মেনে নেব।’ ‘তাহলে গ্রাম থেকে পাঁচজন দরিদ্র লোককে আনতে বলুন, তারা এসে আমার বিচার করুক। তারা যা বিচার করে দেবে তা আমি মাথা পেতে নেব।” ‘মানে? সম্ভ্রান্ত বিচারক তুমি চাও না? ‘হুজুর। দরিদ্ররাও তো মানুষ, সম্ভ্রান্ত লোকরীও মানুষ! ঈশ্বরের কাছে কেউ ছোট নয়, কেউ বড় নয়। এ তো আপনারই কথা! দিন না তাদের বিচার করতে হুজুর? গ্রাম থেকে পাঁচজন বৃদ্ধ কিন্তু অতি দরিদ্র ব্যক্তি এল, এবং সম্রাট নিজে তাদের ডেকে মামলাটা ভাল করে বুঝিয়ে দিলেন এবং এও মনে করিয়ে দিলেন যে, ভাল করে বিচার করবে যাতে তোমাদের সুনাম হয়। তারা সবাই ভাল করে মাথা খাটিয়ে আলোচনা করে দেখল, বীরবল ভীষণ অপরাধী। এত বড় অপরাধের জন্য বীরবলের কমপক্ষে দেড়শো টাকা জরিমানা হওয়া উচিত। এর কমে কিছুতেই হতে পারে না। যেমনই অপরাধ তার তেমনি সাজা। একজন বলল, “দেড়শো? না, না, বীরবল মরে যাবেন। অত টাকা তিনি পাবেন কোথায়? স্ত্রী-পুত্র নিয়ে পথে পথে ভিক্ষে করবেন বলতে চাও? না-না, তা হতেই পারে না কিছুতেই, এতটা অন্যায় বিচার করা যায় না।’ আরেকজন বলল, তা ঠিক বলেছ, বেচারা পাবে কোথায়? যাকগে, পচাত্তর টাকা অর্থদণ্ড দিক। এর কম করলে বিচার ঠিক হবে না। পাঁচজনে পাঁচরকম আলাপ করার পর অবশেষে মাত্র পঞ্চাশ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার সিদ্ধান্ত হল। এও অনেক টাকা। বীরবল চিরজীবন এই শাস্তি মনে রাখবেন। তিনি পঞ্চাশ টাকা কোথা থেকে পাবেন?’ বিচারের সিদ্ধান্ত নিয়ে, তারা এল সম্রাটের কাছে। এসে বলল, জাঁহাপনা, জানি বীরবলের ওপর এটা কঠোর শাস্তি। কিন্তু অপরাধ তাঁর গুরুতর। এই বিপুল পরিমাণ অর্থদণ্ড তাঁর পক্ষে মৃত্যুদণ্ডেরই মতো। কিন্তু উপায় নেই, এ হল ন্যায়বিচারের মানদণ্ড! আপনি দেখুন, এই বিপুল অর্থদণ্ড ছাড়া আমাদের বিচারে আর কিছু করা যায় না।’ ‘মাত্র পঞ্চাশ টাকার শাস্তি!’ সম্রাট এবার একথায় বুঝতে পারলেন বীরবলের চাতুরি। কেন এই দরিদ্র ব্যক্তিদের দিয়ে বিচারের নামে প্রহসন করলেন! অতি দরিদ্র ব্যক্তিদের বিচারে পঞ্চাশ টাকাই হল বিপুল পরিমাণ জরিমানা, সন্দেহ নেই। কিন্তু সম্রাট খুশি হলেন এই ভেবে যে, বীরবল মানুষের মনোজগতেরও বহু খবর রাখেন। দীন দরিদ্র প্রজাদের মন সরল ও নিরপেক্ষ এবং তাদের দ্বারাও যে মহৎ উপকার হয়, তা বুঝিয়ে দিলেন তিনি।

Comments

Popular posts from this blog

**একটা উপদেশ মূলক গল্প**

"একটি শিক্ষা মুলক গল্প"

উপদেশ মূলক ছোট গল্প