দোজখের ছোট ইন্ধন

হযরত বাহলুল (রাঃ) বণর্না করেন,
বসরার পথে আমি কয়েকজন
যুবকের সাক্ষাৎ পেলাম যারা
আখরোট এবং বাদাম নিয়ে
খেলা করছিল । সামান্য দূরে এক
যুবককে দেখতে পেলাম । সে
তাদের খেলা দেখছিল আর
কাঁদছিল । আমি ভাবলাম , এই
ছেলে হয়তো ঐ ছেলেদের
কাছে আখরোট এবং বাদাম
দেখে কাঁদছে । আমি তাকে
বললাম, হে ছেলে কাঁদছ কেন ?
আমি তোমাকে বাদাম ও
আখরোট কিনে দিব । তুমি তা
খেতে পারবে ।
আমার কথা শুনে ছেলেটি মাথা তুলে আমার দিকে তাকাল এবং
বলল, হে নির্বোধ , আমি খেলাধুলার জন্য সৃষ্টি হইনি ? আমি বললাম ,
হে সাহেবজাদা, তাহলে কি জন্য সৃষ্টি হয়েছ ? সে বলল , আল্লাহর
ইবাদতের জন্য । আমি বললাম এটা তুমি কোথা হতে জানতে পারলে ?
আল্লাহ্ তোমার জীবনে বরকত দান করুন । সে বলল, আল্লাহ্ তাআলা
বলেছেন :
অর্থ : তোমরা কি ধারণা করেছ যে , আমি তোমাদেরকে অযথা সৃষ্টি
করেছি , আর তোমরা আমার নিকট প্রত্যার্বতন করবে না । ( সূরা মুমিনূন : ১১৫)
আমি বললাম , হে সাহেবজাদা ! তোমাকে তো বুদ্ধিমান মনে হয় ।
আমাকে কিছু নসিহত কর । সে বলল, দুনিয়া খুবই ক্ষণস্থায়ী । দুনিয়া
চিরকাল কারো জন্য থাকবে না । মানুষও দুনিয়ায় মরণহীন থাকবে না । দুনিয়ার জীবন আর মৃত্যু মানুষের জন্য এমন , যেন
দুটি ঘোড়া দ্রুতগতিতে একের পর এক এগিয়ে আসছে । হে দুনিয়া প্রেমিকগণ ! তোমরা দুনিয়া পরিত্যাগ কর এবং
পরকালের সফরের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ কর ।
হযরত বাহলুল রাহ. বলেন , এই কথা বলে সেই যুবক আসমানের দিকে তাকাতে লাগল এবং হাতে কি যেন ইশারা করে
কাঁদতে লাগল । তার দুই গন্ড বেয়ে মুক্তার মতো অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগল তখন সে একটি ব্যথা ভরা কবিতা পাঠ করল ।
কবিতা পাঠ করে সে বেহুশ হয়ে পড়ে গেল।
আমি তার মাথা আমার কোলে উঠিয়ে নিলাম এবং আমার জামার আস্তিন দ্বারা তার চেহারার ধুলো পরিষ্কার
করলাম । কিছুক্ষণ পর তার হুঁশ ফিরে এলো , আমি বললাম , সাহেবজাদা ! তোমার কি হয়েছিল ? তুমি তো এখনও নিষ্পাপ । কোন গোনাহই তোমার নামে লেখা হয়নি । সে বলল, হে বাহলুল ! আমাকে ছেড়ে দাও । আমি আমার মা’কে দেখেছি তিনি যতক্ষণ পযর্ন্ত বড় বড় লাকড়ির সঙ্গে ছোট ছেট খড় – কুটো না দিতেন ততক্ষণ পযর্ন্ত আগুন উত্তপ্ত হতো না । আমি ভয় করি , দোজখের ছোট ইন্ধন যেন আমি না হই ।
হযরত বাহলুল (রাঃ) বলেন , আমি বললাম , সাহেবজাদা ! তুমি বড় বুদ্ধিমান ও হুশিয়ার। আমাকে আরো কিছু নছীহত কর ।
সে বলল, আফসোস ! আমি গাফলতের মধ্যে রয়েছি , অথচ মৃত্যু আমার পিছু ধাওয়া করছে । আজ না হোক কাল তো অবশ্যই মরতে হবে । দুনিয়াতে নিজের শরীরকে উন্নতমানের পোশাক - পরিচ্ছদ দ্বারা সাজ্জিত করে কি লাভ ? মৃত্যুর পর তো এই দেহ গলে মাটি হয়ে যাবে । কবরে মাটির চাদর এবং মাটির বিছানা থাকবে।মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই সৌন্দর্য নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে । হাড় গোস্তের সামান্য চিহ্নও থাকবে না । জীবনের কতটা কাল অতিবাহিত হয়ে গেল , কিন্তু তারপরও কোন কিছুই অর্জিত হলো না ।
জীবনের দীর্ঘ সফরের কোন পাথেয়ই আমার নেই । আমি আমার হাকীম ও মালিকের সামনে গোনাহর বোঝা নিয়ে কিভাবে দাঁড়াব ?
দুনিয়াতে হাজার পর্দার মাঝ থেকে তাঁর নাফরমানী করেছি , কিন্তু কেয়ামতের দিন সেসব গোনাহ ‘আলেমুলগায়েবে’র সামনে প্রকাশ হয়ে পড়বে ।তিনি ইচ্ছে করলেই শাস্তি দিতে পারেন । আল্লাহ্ তাআলা খুবই দয়ালু ।
হযরত বাহলুল রাহ. বলেন , ঐ ছেলে যখন তার কথা শেষ করে চুপ হয়ে গেল , তখন আমি বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেলাম । তখন সেই ছেলেটি চলে গেল । পরে আমার হুঁশ ফিরে এলে আমি তাকে ছেলেদের মধ্যে তালাশ করে কোথাও খুজে পেলাম না । সেই ছেলেদের অবস্থা জিজ্ঞেস করলে তারা বলল, , তুমি তাকে চিন না ? সে হলো , হযরত হুসাইন ইবনে আলী ইবনে আবু তালেব (রাঃ) এর বংশধর । আমি বললাম, আমার ধারণা ছিল , নিশ্চয় সে এমনই বড় কোন বৃক্ষের ফল হবে।

Comments

Popular posts from this blog

**একটা উপদেশ মূলক গল্প**

"একটি শিক্ষা মুলক গল্প"

উপদেশ মূলক ছোট গল্প